অবশেষে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুলকে ওএসডি

অবশেষে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুলকে ওএসডি

অবশেষে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুলকে ওএসডি
অবশেষে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুলকে ওএসডি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি : অবশেষে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামকে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলামকে ওএসডি করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- এই কর্মকর্তাকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তার নামের পাশে বর্ণিত পদে বদলি পূর্বক নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

জানা গেছে, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে স্ত্রীর অধিকার দাবি করে সন্তানসহ জিনাত আরা খাতুন নামে দিনাজপুরের কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন প্রভাষক (শিক্ষক) জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।

ওই সময় তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সেখানে হৈচৈ শুরুর একপর্যায়ে ইউএনওর স্ত্রী হিসেবে দাবি করা জিনাতের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আনসার সদস্যদের দিয়ে বাইরে বের করে দেন। তখন জিনাত ইউএনওর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে বাস থামিয়ে অনশন শুরু করেন। এ সময় কিছুক্ষণ ধীরগতিতে যান চলাচল করে। এ নিয়ে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঘটনার পর ইউএনওর স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বসে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন এবং সুবিচার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

জিনাত আরা খাতুনের দাবি- আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলাম এর আগে দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার (আরিফুল) সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রথম স্ত্রী থাকার বিষয়টি গোপন করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রি মূলে রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি রেস্ট হাউসে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিবাহের বিষয়টি প্রথম থেকেই কৌশলে গোপন করেন আরিফুল। এমনকি তিনি গর্ভবতী হলেও গর্ভপাতে বাধ্য করেন তার স্বামী। অবশ্য পরে তাদের সংসারে একটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয়। তবে জিনাত আরা খাতুনকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান আরিফুল।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে বুধবার দুপুরে আক্কেলপুরের বর্তমান ইউএনও মো. আরিফুল ইসলামের বাংলোতে দেখা করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আসা পরিবারের সদস্যদের হেনস্তার পর বাইরে বের করে দেন নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্যরা। তখন তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ইউএনও। পরে জিনাত আরাকে তালাক দেন তিনি। এর কারণে বিকালে কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কের যানবাহন আটকে অনশন শুরু করেন।

জিনাত আরার ভাই মুক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম আমার বোনকে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে তিনি বিষয়টি গোপন করে। তিনি তার শিশুসন্তান এবং স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। আমার বোনের স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এখানে এলে তিনি আমাদের হেনস্তা করেছেন।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রথম আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে ট্র্যাপে ফেলার একটি বিষয় ছিল। তাকে (জিনাত আরা) তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।’

জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, ‘আক্কেলপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমকে আক্কেলপুরে পদায়ন করা হয়েছে।’

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply